প্রকাশিত: Sat, Dec 30, 2023 8:27 PM
আপডেট: Mon, May 12, 2025 10:17 AM

[১]দিগন্ত জুড়ে হলুদের ছোঁয়া, ময়মনসিংহে সরিষার বাম্পার ফলন

আব্দুল্লাহ আল আমীন: [২] ময়মনসিংহ সদর উপজেলা জুড়ে গায়ে হলুদে সেজেছে সরিষা ফুলের কৃষকের মাঠ। যে দিকে তাকান দিগন্ত জুড়ে যেন হলুদ আর হলুদ রং। 

[৩] জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী জেগে উঠা চরের দিকে তাকালে মনে হয় ফসলের মাঠ সেজেছে যেন গায়ে হলুদের সাজে। মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ রাজার দেশে মৌমাছির মধু সংগ্রহের গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

[৪] চলতি রবি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মিটানো সম্ভব হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

[৫] চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যােগে কৃষি প্রণোদনার আওতায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করে। এছাড়াও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রনোদনা হিসেবে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের বিনামূল্যে উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।

[৬] চরঈশ্বরদিয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান এই এলাকার কৃষকগণ রোপা আমন ধান কাটার পর ৯০-১২০ দিন পর্যন্ত জমি পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে  স্বল্পমেয়াদী উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা ১৪ চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। কৃষকদের কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়েছি যে ধানের উৎপাদন না কমিয়েও সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করলে কৃষকগণ লাভবান হবে। কৃষকগণ সাড়া দিয়েছেন যার ফলে এই এলাকায় সরিষা চাষ ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে আশাকরছি এই বছরের ফলন দেখা আগামী বছর আরো বেশি কৃষক সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকবে। [৭] চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের কৃষকরা বলেছেন আগে তাদের এলাকায় আমন ধান কাটার পর জমি পতিত থাকতো এখন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবং উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার সরিষা বীজ ও সার পেয়ে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করেন। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরোর চাষাবাদ করা যাবে। আগে দুটি ফসল হতো এখন অল্প সময়ে একই জমিতে তিনটি ফসলের চাষে লাভবান হওয়া যাবে। [৮] জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে ৭৫-৯৫ দিন। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। সরিষার দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো চাষে খরচ করা যাবে পাশাপাশি তাদের ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটানোও সম্ভব হবে। 

[৯] চরলক্ষীপুর এলাকার কৃষক শহীদুল ইসলাম বলেন, কৃষি থেকে পাওয়া বীজ দিয়ে এবছর এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। দুই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভাল দেখা যাচ্ছে। সরিষার ক্ষেতে গেলে প্রানটা ভরে যায়।

[১০] ময়মনসিংহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুবায়রা বেগম সাথী জানান চলতি সরিষা মৌসুমে ৫ হাজারের অধিক  কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করাসহ ৮ হাজার ৮শ ২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষা হয়েছে। তিনি আরও জানান কৃষি  ভোজ্য তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যেহেতু তেল উৎপাদন কম হয়। তাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তৈলাক্ত ফসলের ৫০ ভাগ আমাদের দেশ থেকে উৎপাদন করা সম্ভব। সেইসাথে কৃষিবিভাগ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের সরিষা চাষ করতে প্রনোদনা দিচ্ছি ও চাষিদের লাভের জন্য দু'ফসলি থেকে তিন ফসলি জমি তৈরী করতে উৎসাহিত করছি।